অনলাইন ডেস্ক : পুজোর তিন দিন বা ভাসান, নেশার জেরে শিলচরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছরই এই চার দিনে ঘটে যায় বহু অপ্রীতিকর ঘটনা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবার পুজোয় মাতালদের তাণ্ডব রুখতে পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে বললেন শিলচরের সাংসদ তথা রাজ্যের আবগারি সহ অন্যান্য বিভাগের প্রাক্তন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।
পুজোর প্রস্তুতিকে সামনে রেখে সোমবার পুরসভার পক্ষ থেকে এক সভার আয়োজন করা হয়। পুরসভা ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত এই সভায় পদাধিকার বলে পুরসদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শুক্লবৈদ্য। সভায় শহরের বিশিষ্টজনরা পুজোয় মাতালরাজ নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেনকে উদ্দেশ্য করে সাংসদ বলেন, মাতালদের দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে সবাই শান্তিতে পুজো উপভোগ করতে পারেন। পরিমলবাবু এক্ষেত্রে এতোটাই আপসহীন
মনোভাব দেখান যে, পুলিশকে পুজোর পাঁচ দিন আগে থেকেই মাতালদের সনাক্ত করতে “ব্রেথ এনালাইজার” নিয়ে ময়দানে নেমে পড়তে বলেন। আর শনাক্তকরণের পর কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে
তিনি বলেন, মাতালদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া অবস্থান নিয়েছে, পাঁচ দিন আগে থেকে ময়দানে নেমে পুলিশ এই বার্তা ছড়িয়ে দিলে মাতালরা আর উৎপাতের সাহস পাবে না। পরিমলবাবুর একথায় সায় দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, এ নিয়ে বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঙ্গে তিনি জানান, এবার তারা পুজোর দিনগুলোতে শহরের ক্যাপিটাল মোড় থেকে রাঙ্গিরখাড়ি পর্যন্ত রাস্তাকে
“প্যাডেস্ট্রিয়ান জোন” হিসেবে ঘোষণা করার কথা ভাবছেন। এতে পুজোর তিনদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তার এই অংশটুকুতে কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। আর পায়ে হেঁটে কোন ঝঞ্জাট বিনেই দর্শনার্থীরা দর্শন করতে পারবেন পুজো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন কলকাতায় পূজায় এমন ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে প্রতিবছরই। শিলচরে এবার এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করলেও তারা এখনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছান নি। স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে বর্তমানে কিছু কিছু দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিনের সভায় ভাসানে গতি আনতে ভাসানঘাটে ট্রলির ব্যবস্থা করা, পুজোর দিনগুলোতে শহরের বিভিন্ন অপরাধ প্রবণ এলাকায় পর্যাপ্ত আলো এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, শব্দ দূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বচ্ছতা বজায় রাখা উত্থাপন করা হয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গ।
ভাসানে গতি আনতে ট্রলির ব্যবস্থা করার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বরাকবঙ্গের কর্মকর্তা তৈমুর রাজা চৌধুরী। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, বিগত দিনে নিহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ডের জমানায় একবার ভাসানে ট্রলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণে সেই ট্রলি কারিগরি দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ায় তা পুরোপুরি কাজে আসেনি। আর গাড়ি থেকে প্রতিমা নামানোর পর ট্রলির বদলে যেভাবে বাঁশ ব্যবহার করে বিসর্জন স্থলে নিয়ে যাওয়া হয় তা যেমন সময় সাপেক্ষ তেমনি এতে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই অন্যান্য শহরের মতো শিলচরেও ভাসানে ট্রলির ব্যবস্থা করা উচিত। এ কথা বলে তিনি উপযুক্ত কারিগরি পরামর্শ নিয়ে ট্রলি তৈরির উপর জোর দেন। চৌধুরী সঙ্গে বিভিন্ন পূজো মণ্ডপে ব্যবহৃত ব্যানার, হোডিং ইত্যাদিতে প্রায়ই যেভাবে ভুল বাংলা বানান লিখা হয়ে থাকে এনিয়েও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চৌধুরীর বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংসদ শুক্লবৈদ্য জানান, উপযুক্ত মানের ট্রলি তৈরীর জন্য অর্থের ব্যবস্থা করবেন তিনি। এর জন্য সভায় উপস্থিত পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক ভানলাল লিমপুইয়া নামপুইকে আগামী দুদিনের মধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেন।
কংগ্রেস কর্মকর্তা পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী তারাপুর উড়ালপুল সংলগ্ন রেল লাইন সহ শহরের বিভিন্ন নির্জন স্থানে পুজোর দিনগুলোতে পর্যাপ্ত আলো এবং নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করতে বলেন। বিজেপি জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত দলের কর্মকর্তা রাজেশ দাস বলেন, ভাসানের দিন প্রায় প্রতিবছরই অম্বিকাপট্টি, প্রেমতলা, দেবদূত মোড় এবং ডাকবাংলা মোড়ে হাঙ্গামা বেঁধে থাকে। তাই ওইদিন সেসব এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সিআরপিএফ জওয়ান এবং মহিলা পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করা জরুরী। রাজেশ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পুরস্কার চালু করার উপরও জোর দেন।
বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা মৃদুল মজুমদার বিভিন্ন পূজো মণ্ডপে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ৭০ ডেসিবলের নিচে মাইক বাজানো যাতে বাধ্যতামূলক হয় এনিয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। শব্দ দূষণ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন সিপিএম কর্মকর্তা তথা জেলা বার সংস্থার সভাপতি দুলাল মিত্রও। শব্দ দূষণ রুখতে অনেকেই ডিজে বাজানোর ক্ষেত্রে লাগাম টানার কথা বলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন
সভায় উপস্থিত অন্যান্যরা পুজোর দিনগুলোতে সকাল এবং বিকেল দুবার পানীয় জল সরবরাহ, লোডশেডিং এড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণ, নদীর জল দূষণ রুখতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে হাতে থাকা অস্ত্র এবং অন্যান্য দূষণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য পুজো কমিটিগুলোকে চিঠি পাঠানো, ভাঙ্গা ফুটপাতে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক ভানলাল লিমপুইয়া নামপুই জানান, প্রতিটি পূজো মন্ডপের পাশে দুটি করে ডাস্টবিন বসানো, পূজা মন্ডপের চারদিকে স্বচ্ছতা বজায় রাখা, প্লাস্টিকের তৈরি মালা বা সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে জল প্রদুষণকারী আভূষন সরিয়ে রাখা, বিসর্জনের সময় ন্যূনতম ১০ জন করে শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি নির্দেশিকা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এবার তিথি বিভ্রাটে ১২ অক্টোবর শনিবার নবমীর দিনই শুরু হয়ে যাবে দশমী। আর এরপর দিন একাদশী। তাই অনেক বাড়ির পূজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়ে যাবে শনিবারই। এই পরিস্থিতিতে ওই দিনও বিসর্জন ঘাটে পুলিশ এবং পুরসভার তরফে যাতে ব্যবস্থা রাখা হয় এনিয়ে প্রস্তাব করেন অনেকে।
সাংসদ শুক্লবৈদ্য বলেন, স্বচ্ছতা বজায় রাখা, ৭০ ডেসিবেলের উপরে মাইক না বাজানো, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে ভাসান ইত্যাদি পরামর্শ সম্বলিত বার্তা শীঘ্রই পাঠানো হবে বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে। সঙ্গে তিনি সভায় উপস্থিত পূর্ত( সড়ক) , অভ্যন্তরিন জল পরিবহন বিভাগ, এপিডিসিএল সহ অন্যান্য সরকারি বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে পুজোয় নিজ নিজ বিভাগের সংশ্লিষ্ট পরিষেবা যাতে স্বাভাবিক থাকে এনিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। সাংসদ এও বলেন বিভিন্ন সরকারি বিভাগকে অনুরোধ জানানো হবে পুজোর দিনগুলোতে নিজ নিজ বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় যেন কয়েকটি হ্যালোজেন বাল্ব লাগানো হয়। যাতে করে দূরীভূত হয় অন্ধকারের সমস্যা।
এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিলচর ডিএস এর প্রাক্তন সভাপতি বাবুল হোড়, ডিএসপি হেমেন দাস,বিজেপি কর্মকর্তা নিত্যভূষন দে, ট্রাফিক ইনচার্জ মানবজ্যোতি মালাকার প্রমূখ।
শেষে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন পুরসভার অ্যাসিস্টিং অফিসার নবোত্তম শর্মা।