অনলাইন ডেস্ক : শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান-এর নামে দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়ে আসার পর তদন্তের জন্য রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিশকে। পুলিশি তদন্ত কতদূর এগুবে তা সময়ই বলবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে প্রাথমিক তদন্তে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে, কারসাজি করে বছরের পর বছর ধরে বাইরের রোগীদের এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করিয়ে সিন্ডিকেটের লোকেরা পকেটে ঢুকিয়েছে কোটি কোটি টাকা। আর এর দায়ভার এড়াতে পারেন না রেডিওলোজি বিভাগের কর্তৃপক্ষও।
এই দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের জন্য থানায় এজাহার দায়ের করেছেন সুপারিনটেনডেন্ট ডা: দেবকুমার চক্রবর্তী । কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো ডা: চক্রবর্তীই আবার দীর্ঘ বছর ধরে রয়েছেন রেডিওলোজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে। প্রশ্ন উঠছে সুপারিনটেনডেন্ট এজাহার দায়ের করলেও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে খোদ তার তরফেই কি নিরীক্ষণে খামতি ছিল। অন্যথায় বছরের পর বছর ধরে এসব চললো কিভাবে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্টেও নিরীক্ষণের খামতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মেডিক্যালের এক সূত্রে জানা গেছে, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান-এর নামে দুর্নীতির খেলায় বিগত দিনে খেলা হত “বিপিএল” তাস। বাইরের রোগীদের এসব করাতে গিয়ে এদের খাতায় পত্রে দেখানো হতো “বিপিএল” হিসেবে । আর এদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা মেডিক্যালের তহবিলে জমা না দিয়ে উদরপূর্তি হতো একাংশ কর্মী ও বাইরের দালালদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের । অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে “বিপিএল” স্তরের রোগীদের ছাড় দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান- এর ক্ষেত্রে তা নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেডিক্যালের সুপারিনটেনডেন্ট অনুমোদন করে দিলে ছাড় দেওয়া যায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাপারটা নজরে এলে দেখা যায় “বিপিএল” স্তরের সাজিয়ে বাইরের রোগীদের সিটি স্ক্যান ও এম আর আই করার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৎকালীন সুপারিনটেনডেন্টের সিল- স্বাক্ষর জালিয়াতি করেও কাজ হাসিল করা হয়েছে। এরপর রেডিওলজিতে কর্মরত এক ঠিকাভিত্তিক কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এত বড় দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়ে এলেও আশ্চর্যজনকভাবে শুধু ওই ঠিকাভিত্তিক কর্মীকে বহিষ্কার করেই এই পর্বে ইতি টানা হয়। সে সময় যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো পরবর্তী পর্বে এড়ানো যেত দুর্নীতি।
এভাবে ব্যাপারটা মিটে যাওয়ার পর সিন্ডিকেটের লোকেরা তাদের কারবার চালানোর জন্য বের করে ফেলে নতুন পন্থা। বৈধভাবে ফি দিয়ে মেডিক্যালের যেসব রোগী সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করান তাদেরই রশিদ নম্বর একাধিকবার ব্যবহার করে শুরু হয় বাইরের রোগীদের এসব পরীক্ষা করানো। যা বেরিয়ে এসেছে এবারের অভ্যন্তরীণ তদন্তে। এবার কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির বিশাল বহর দেখে দারস্ত হয়েছেন পুলিশের। এই অবস্থায় পুলিশ ব্যাপারটাকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এর উপরই নির্ভর করতে সবকিছু।