অনলাইন ডেস্ক : অসম সরকারের আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাঙালি এবং সংখ্যালঘুরা এবারও বঞ্চিত হলে ২০২৪-এর নির্বাচনে শাসকদলকে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে, হুংকার দিয়েছেন বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়। এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, আগামী তিন ও চার তারিখে অসম সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হবে। এর পর আগামী ১১ তারিখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ৫০ হাজার প্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিকভাবে যাতে রাজ্যের বাঙালি সহ সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করা না হয়, এই দাবি তুলেছেন তাঁরা। প্রদীপ দত্তরায় বলেন, বিগত দিনে যে ৪০ হাজার পদে নিয়োগ হয়েছে, তাতে বাঙালি সহ সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। অথচ রাজ্যের তিন কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। আর এমনও নয় যে, তাঁদের মেধা নেই। তাই জনসংখ্যার অনুপাতে প্রস্তাবিত ৫০ হাজার পদের মধ্যে অন্তত ১৫,০০০ বাঙালি প্রার্থীর চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় নাম থাকার কথা। প্রদীপবাবু বলেন, বরাকে রেজিস্ট্রিকৃত বেকারের সংখ্যা বর্তমানে চার লক্ষাধিক। তাই বরাকেরও যথেষ্ট সংখ্যক প্রার্থী আগামী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। তিনি বলেন, তাঁরা চাইছেন, এবার যেন বাঙালি সহ সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনও বৈষম্য না হয়। এ ব্যাপারে তিনি নবগঠিত বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর কর্মকর্তাদের সোচ্চার হওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন। দত্তরায় আরও বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেবেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। শিলাদিত্য দেব যেভাবে সবসময় হিন্দু বাঙালিদের নিয়ে মেরুকরণ করে থাকেন, সেভাবে এবার রাজ্যের হিন্দু বাঙালিদের চাকরির ব্যাবস্থা করে তাঁর হিন্দুপ্রীতির নিদর্শন রাখুন। বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বরাকের সমস্ত বিধায়ক ও সাংসদদের এই ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আরএসএস, বজরং দল, কিংবা বিশ্বহিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনের সাথে বহু হিন্দু বাঙালি যুবক-যুবতী যুক্ত। অথচ আজ পর্যন্ত বাঙালি-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনও দাবিতে এই সব সংগঠনের কোনও বক্তব্য শোনা যায়নি। প্রদীপ বলেন, যদি রাজ্যের হিন্দু বাঙালিদের প্রতি তাঁরা সত্যিই সহানুভূতিশীল হন, তবে আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাঙালি হিন্দুদের প্রতি যাতে বৈষম্য না হয় তা দেখার দায়িত্ব তাঁদের উপরও বর্তায়। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যে সব বাঙালি সংগঠন রয়েছে তাদেরও জোরালোভাবে এ ব্যাপারে দাবি জানানোর আবেদন জানিয়েছেন তিনি। প্রদীপ দত্তরায় বলেন, আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাঙালিদের কতজন চাকরি পান তার উপর ভিত্তি করেই ২০২৪-এর নির্বাচনে এ রাজ্যের বাঙালিরা কোন দলকে ভোট দেবেন তা নির্ধারিত হবে। এ মর্মে রাজ্যের সমস্ত বাঙালিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিডিএফ-এর মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রাথমিক তালিকায় বরাক উপত্যকার প্রচুর প্রার্থীর নাম রয়েছে বলে শিলচরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলে গেছেন। অথচ তাঁদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বরাকের জেলাভিত্তিক সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বাধ্য হয়ে এ ব্যাপারে মুখ্য তথ্য আধিকারিকের কাছে আরটিআই আবেদন করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে তিনি সেবা বোর্ডের দফতরে পাঠিয়ে দেন। সম্প্রতি সেবা-র আধিকারিক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত ফলাফল না বেরোনো পর্যন্ত এই তালিকা দেওয়া যাবে না। হৃষীকেশ বলেন, যদি তা-ই হয়, তা-হসে মুখ্যমন্ত্রী কীসের ভিত্তিতে এত জোর দিয়ে তালিকায় বরাকের প্রার্থীদের নাম রয়েছে বলে গেলেন? কে সত্য বলছেন, সেটাই বোঝা মুশকিল। তাই আগামীতে যাতে জেলাভিত্তিক নিয়োগ তালিকা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এ ব্যাপারে তিনি মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।