অনলাইন ডেস্ক : বিজেপি নেতা তথা উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কার্যবাহী সদস্য মনজিৎ নাইডিংয়ের ছোট ভাই প্রসেনজিৎ নাইডিংয়ের অপহরণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই এই নাটকের যবনিকা পড়ে। অপহৃত প্রসেনজিৎ নাইডিংকে মুক্তি দিল সন্দেহভাজন ইউনাইটেড ডিমাসা লিবারেশন আর্মি সংক্ষেপে ইউডিএলএ জঙ্গি সংগঠন। শুক্রবার রাত ৮ নাগাদ জঙ্গিরা নাইডিংকে মুক্ত করে দেওয়ার পর ডিমা হাসাও পুলিশ প্রসেনজিৎকে উদ্ধার করে লামডিং ও মান্দারডিসার মধ্যবর্তী রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে।
এদিকে, শনিবার এক সাংবাদিক সন্মেলন করে ডিমা হাসাও জেলার পুলিশসুপার বলেন প্রসেনজিৎ নাইডিংকে কোনও উগ্রপন্থী সংগঠন তার থাইজোয়ারি বাসভবন থেকে বন্দুকের নলের মুখে অপহরন করে নিয়ে যায়নি। সমগ্র অপহরণের চিত্রনাট্য ক্ষোদ প্রসেনজিৎ নাইডিং ও তার বন্ধু সাতিলজিৎ নাইডিং তৈরি করে বলে জানিয়ে পুলিশসুপার বলেন ১৬ এপ্রিল প্রসেনজিৎ নাইডিংয়ের বিয়ে হয়েছিল এবং ১৭ এপ্রিল প্রসেনজিৎয়ের থাইজোয়ারির বাড়িতে কিছু রীতি নিয়ম চলছিল রাত ২ টা নাগাদ প্রসেনজিৎয়ের বন্ধু সাতিলজিৎ নাইডিং তার গাড়ি করে ডিমাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
তিনি বলেন, ডিমাপুর যাওয়ার পথে নাগাল্যান্ড সীমান্তে তাদের গাড়ি লাহরিজানে পুলিশ তল্লাশি চালায় এবং তাদের কাছ থেকে পুলিশ ফাইনও কাটে যার ভিডিও ফুটেজ ও রসিদ ডিমা হাসাও পুলিশের হাতে এসেছে। প্রসেনজিৎকে উদ্ধারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ এই তথ্য উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন পুলিশসুপার।
সাংবাদিক সন্মেলনে পুলিশসুপার ময়ঙ্ক কুমার আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল পুলিশের কাছে খবর আসে প্রসেনজিৎ নাইডিং সন্ধানহীন খবর পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে তারপরই এ দিনই সন্ধ্যা ছয়টায় প্রসেনজিৎ নাইডিংয়ের বড় ভাই মনজিৎ নাইডিংয়ের মোবাইলে ডিমাপুর থেকে হেম্বানন পর্বসা ওরফে এক্সোর ফোন আসে যে প্রসেনজিৎ তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোয় তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং সে এখন তাদের কাছে রয়েছে তাই এবিষয়ে পুলিশকে খবর দিলে প্রসেনজিতের ক্ষতি হবে বলে। এ তথ্য পেয়ে উমরাংসোর এসডিপিও ও দিয়ুংমুখ থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি ডিমাপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতায় অভিযান শুরু করে এতে চাপে পরে সন্দেহভাজন ইউডিএলএ জঙ্গিরা প্রসেনজিৎকে ডিমাপুর রেল স্টেশনে ছেড়ে দেয়। এবং সেখান থেকে ট্রেনে লামডিং ফিরে প্রসেনজিৎ তার দাদাকে ফোন করে এবং তারপর মান্দারডিসা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি লামডিং থেকে প্রসেনজিৎকে উদ্ধার করে হাফলং নিয়ে আসে রাত ১২ টায় তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর পর প্রসেনজিৎ পুলিশকে জানায় তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল তাই সে ডিমা হাসাও জেলা ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইছিল এবং সাতিলজিৎ নাইডিংয়ের সঙ্গে মিলে সে এই চিত্রনাট্য তৈরি করে সমস্যা থেকে দূরে থাকতে এবং মানুষের সহানুভূতি আদায় করার লক্ষ্যে। পুলিশসুপার বলেন, সাতিলজিৎ নাইডিংয়ের সঙ্গে আগে থেকেই হাম্বানন পর্বসার যোগাযোগ ছিল তাই প্রসেনজিৎ নাইডিংকে ডিমাপুর নিয়ে যাওয়ার পর তার মুখ হাত চোখ বেধে ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। এবং এই ছবিতে দেখা যায় প্রসেনজিৎ নাইডিংয়ের পাশে দুই জঙ্গি একজনের হাতে একে ৪৭ রাইফেল ও একজনের হাতে পিস্তল রয়েছে বলে পুলিশসুপার জানান। তবে প্রসেনজিৎ নাইডিং ও সাতিলজিৎ নাইডিং যে গাড়ি নিয়ে ডিমাপুর গিয়েছিল সেই গাড়ি নাগাল্যান্ডের দয়াপুর থেকে ডিমাপুর পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করে ডিমা হাসাও পুলিশ। তবে প্রসেনজিৎ অপহরণের যে চিত্রনাট্য তৈরি করেছিল তার জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের কথা ও বলেন সাংবাদিক সন্মেলনে পুলিশসুপার। তিনি বলেন, নাগাল্যান্ডে থেকে হাম্বানন পর্বসা একটি জঙ্গি দল তৈরি করতে চেষ্টা করছে বলে ময়ঙ্ক কুমার তাদের হাতে অস্ত্র রয়েছে ঠিকই তবে হাম্বানন কেম্প্রাই যদি মূলস্রোতে ফিরে আসতে চায় বা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে তাহলে পুলিশ তা স্বাগত জানাবে আর যদি অপহরণ তোলাবাজি এসব চালিয়ে যায় তাহলে পুলিশ এনিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানিয়ে ময়ঙ্ক কুমার বিশেষ করে ডিমা হাসাও জেলার যুব সমাজের কাছে আহ্বান জানান তারা যাতে কোনও অবস্থায় এধরণের রাস্তায় পা না বাড়ান। কারণ এতে ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে তাই এর থেকে দূরে থাকার জন্য যুব সমাজের কাছে আহ্বান জানান। পুলিশসুপার বলেন আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য এদের এভাবে থাকার সুবিধা করে দিয়ে এদের ব্যবহার করছে। তাই এধরণের রাস্তা থেকে ফিরে আসার জন্য বিপথে পরিচালিত যুবকদের আবেদন জানিয়েছেন পুলিশসুপার ময়ঙ্ক কুমার। সাংবাদিক সন্মেলনে পুলিশসুপারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশসুপার ফারুক আহমেদ।