অনলাইন ডেস্ক : ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে ন্যায় সংহিতা। এই পরিবর্তনকে ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তি বলে অভিমত ব্যক্ত করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও এ নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা গেছে শিলচর জেলা বার সংস্থার বরিষ্ট সদস্য
আইনজীবী নিহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের মুখে। তাঁর কথায়, ঔপনিবেশিকতাকে কোথায় বিসর্জন দেওয়া হল। বিসর্জন দিতে হলে তো উচিত ছিল আইনজীবীদের “ড্রেস কোড”ও বদলে ভারতীয় আঁধারে তা পরিবর্তন করা। সঙ্গে তিনি এও বলেন, নয়া আইন ব্যবস্থা আসলে মামলার পাহাড়ই বৃদ্ধি করবে।
মঙ্গলবার আইনজীবী দিবসে শিলচর জেলা বার সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে সংস্থার সদস্য ৫ বরিষ্ট আইনজীবীকে। ইয়াসিন আলী, দেবাশীষ সোম, ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, বিথীকা আচার্য ও দেবাশীষ সেনগুপ্ত এই ৫ জনকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন নিহারেন্দ্রবাবু।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পর্বের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন নিহারেন্দ্র বাবু ও অন্য বরিষ্ঠ আইনজীবী প্রসেনজিৎ দেব। নিহারেন্দ্রবাবু বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ও ভারতীয় ন্যায় সুরক্ষা সংহিতার উপর। আর প্রসেনজিৎবাবুর বক্তব্যের বিষয় ছিল ভারতীয় স্বাক্ষ্য অধিনিয়ম । নিহারেন্দ্রবাবু তাঁর বক্তব্যে, আগাগোড়া নতুন আইনের কিছু খামতি ও এর দৌলতে কি কি অসুবিধা হতে পারে সবিস্তারে তা তুলে ধরে বলেন, পরিবর্তন যখন হয়েছে তখন আইনজীবী ও বিচারবিভাগীয় কর্তারা তা সমর্থন করতে বাধ্য। তবে
কিছু কিছু পরিবর্তন দেখলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এসব কি আদৌ সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। এরপর স্পষ্টভাবে বলেন, নতুন আইনের দৌলতে চালু হওয়া কিছু কিছু নিয়ম মামলার পাহাড়ের বহরটাই বৃদ্ধি করবে। কারণ এক্ষেত্রে রয়ে গেছে অনেক জটিলতা।
নিজের বিষয় “ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম” প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎবাবু বলেন, প্রযুক্তির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এক্ষেত্রে পুরনো ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ পুরনো ব্যবস্থায় প্রযুক্তিভিত্তিক প্রমাণের খুব একটা গ্রাহ্যতা ছিল না।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা ও দায়রা জজ বিপ্রজিত রায় বলেন, আইনজীবীরা সংবিধানের রক্ষক। সমাজের প্রতি তাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। একথা মাথায় রেখেই আইনজীবীদের কাজ করে যেতে হবে।
সংবর্ধনা প্রাপ্ত ৫ আইনজীবীর মধ্যে ইয়াসিন আলী দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তথা আইনজীবী ড: রাজেন্দ্র প্রসাদ -এর
জন্মদিন ৩ ডিসেম্বর প্রতিবছর আইনজীবী দিবস পালন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি ড: রাজেন্দ্র প্রসাদের আদর্শ অনুসরণ করে আইনজীবীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
দেবাশীষ সোম বলেন দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি আইন ব্যবসা করছেন। এই সময়কালে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে তিনি বলতে পারেন, আইনজীবীদের সব সময় খোলা মনে ও শেখার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। তিনি আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবনের শুরুর লগ্নে সমীর কুমার সেনাপতি ও অশোক পাল চৌধুরী সহ অন্যান্যদের সান্নিধ্যে কিভাবে উপকৃত হয়েছেন তুলে ধরেন তা-ও।
ইমাদ উদ্দিন বুলবুল বলেন, ১৯৮৪ সালে তিনি যখন আইনজীবী হিসেবে বার সংস্থায় যোগ দেন, তখন সংস্থার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭৫। বর্তমানে যা দাঁড়িয়েছে ৭শতেরও বেশি। তিনি বলেন আইনজীবী হিসেবে বিচারকদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা পেতে হলে আইনের ব্যাপারে জ্ঞানী হতে হবে অবশ্যই। সঙ্গে আরও বলেন, আপাত দৃষ্টিতে বাইরে থেকে তিনি খুব নরম প্রকৃতির লোক হলেও ভেতরে ভেতরে খুবই কড়া। তিনি যদি বিচারক হতেন তবে তার জীবনে সে ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অবশ্যই কমপক্ষে ৭-৮ টা মামলায় ফাঁসির সাজা শোনাতেন। কথায় কথায় তিনি পুলিশ আধিকারিক নারায়ণ চন্দ্র তামুলির সাজাপ্রাপ্তি সহ তার জীবনে ওকালতি করা এধরনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মামলার কথা তুলে ধরেন।
বিথীকা আচার্য বলেন, তিনি যখন বার সংস্থায় যোগ দেন তখন শিলচর তো বটেই রাজ্যের কোনও জেলা আদালতেই ছিলেন না মহিলা আইনজীবী। গোটা রাজ্যে জেলা আদালতে তিনিই প্রথম মহিলা আইনজীবী। নতুন আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইনজীবির পেশায় টিকে থাকতে হলে আইন সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে হবে অবশ্যই।
দেবাশীষ সেনগুপ্ত বলেন, আইন হলো নীতির বাহক আর আইনজীবীরা নীতির সেবক। আইনজীবীদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে একথা। সেই ১৯৮৫ সালে প্রয়াত আইনজীবী কিরনেন্দু দত্ত চৌধুরীর হাত ধরে আইন ব্যবসায় তাঁর পদার্পণের কথাও তুলে ধরেন দেবাশীষবাবু।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন বার সংস্থার সম্পাদক নীলাদ্রি রায়। শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি দুলাল মিত্র।