অনলাইন ডেস্ক : কাছাড় জেলার বড়খলার এক নাবালিকাকে তিন বছর ধরে ধর্ষণ এবং ব্ল্যাকমেল করেছিল ডালিম হোসেন নামের এক লরিচালক। তার নগ্ন ছবি দেখিয়ে একসময় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বেঙ্গালুরু শহরে। আদালতের নির্দেশে শেষমেষ পুলিশ সেই নাবালিকাকে উদ্ধার করে, সঙ্গে গ্রেফতার করে ডালিম হোসেনকে। আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফেরে সেই নাবালিকা এবং মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনে এসে তুলে ধরে তার ভয়ানক অনুভূতির কথা।
২০২২ সালে যখন সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত, তখষ তার ওপর চোখ পড়ে লরিচালক ডালিম হোসেনের। মেয়েটি তার বাবার চায়ের দোকানে কাজ করতো এবং সেখানে এসেই চা খাওয়ার অজুহাতে একদিন তাকে কুপ্রস্তাব দেয় ডালিম। মেয়েটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও বিষয়টি তার পরিবারের লোকেদের জানায়নি। একদিন যখন তার মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন না, ডালিম হোসেন তার বন্ধুদের নিয়ে জোর করে বাড়িতে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং তার নগ্ন ছবি তোলে। সেই ছবি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। মেয়েটির মা বরখলা থানায় মামলা করতে যান কিন্তু সেখানে পুলিশ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং মামলা গ্রহণ করবে না বলে জানায়। এদিকে ডালিম হোসেনের স্ত্রী এবং গ্রামের কিছু লোক মিলে একটি গ্রামীণ সভা আয়োজন করে। সেখানে ডালিম হোসেনকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। তবে এরপর কিছুদিন সে মেয়েটির সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। কয়েক মাস পর থেকেই শুরু হয় পুনরায় আগের মতই অত্যাচার। পরিবারের লোকেরা একসময় মেয়েটিকে লুকিয়ে রাখেন এবং ডালিম হোসেন তাদের নামে কুৎসা রটায়।
মেয়েটির মা জানিয়েছেন, এবছর মে মাসের ১০ তারিখ তাদের বাড়িতে অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে কীর্তন ছিল এবং সেদিন রাতেই তাদের মেয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়। পরের দিন সকালে তিনি থানায় যান এবং পুলিশ তাকে গোটা দিন বসিয়ে রেখে রাত ১টায় জানায়, তার মেয়েকে ডালিম হোসেন নিয়ে যায়নি বরং সৌরভ দাস নামের এক ছেলের সঙ্গে রয়েছে সে। মহিলা বলেন, ‘আমি সৌরভ দাস বলে কাউকে চিনি না, তবে আমার মেয়েকে ডালিম হোসেন নিয়ে গেছে এনিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। আমাদের নানানভাবে ধমকানো হয় এবং বলা হয় সৌরভের নামে মামলা করতে। আমরা শেষমেষ আদালতে এসে মামলা করি এবং কিছুদিন পর পুলিশ জানায় আমার মেয়েকে ব্যাঙ্গালোরে পাওয়া গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি জানাই আমার কাছে টাকা নেই, তারা আমাকে গালাগাল দেন।’মেয়েটি জানিয়েছে তাকে ভয় দেখিয়ে ব্যাঙ্গালোর নিয়ে গেছিল ডালিম হোসেন এবং সেখানে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সে বলে, ‘আমাকে দিয়ে নানান রকমের কাজ করানো হতো এবং আমি প্রতিবাদ করলেই সে ভয় দেখাতো আমার নগ্ন ছবি সবাইকে দিয়ে দেবে। একদিন সকালে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধারকরে এবং ডালিম হোসেনকেও আটক করা হয়। তারা ট্রেনে আমাদের নিয়ে আসছিলেন এবং সেখানেই এক মহিলা পুলিশ আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তারা আমাকে শিখিয়ে দেন আমি যেন আদালতে বলি, ডালিম হোসেন আমাকে নিয়ে যায়নি বরং আমি ওকে নিয়ে পালিয়েছিলাম। তবে আমি আদালতে সত্যি কথা বলেছি এবং ডালিম হোসেন গ্রেফতার হয়েছে। আমি চাই তার কঠোর শাস্তি হোক।’
পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, তারা অপরাধীকে গ্রেফতার করেছেন এবং মামলার তদন্ত হয়েছে। পুলিশ সুপার নুমাল মাহাত্তা বলেন, ‘এই মামলার তদন্তর শেষ এবং মূল অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি।এবার আদালতে তার বিচার হবে।’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এমন কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি ফলে এনিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে মিঠুন নাথ জানিয়েছেন, এই মামলায় কিছু পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক এবং তারা এর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, ‘একটি নাবালিকা ধর্ষণ হওয়ার পর পুলিশ যেভাবে তাকে হেনস্থা করেছে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর পিছনে বড়সড় চক্রান্ত রয়েছে এবং আমরা গোটা বিষয়ে তদন্ত করছি। যেসব পুলিশ আধিকারিক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য ওপর মহল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না হয় তার জন্য প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাব আমরা।’