অনলাইন ডেস্ক : কমেডি অফ এরোরস -ই বটে। একে তো তারাপুরের বাসিন্দা। পরপর পাশাপাশি দু ‘ গলির লোক। হাতে হাত ধরে তারাপুর অ্যাথলেটিক ক্লাবের দায়িত্ব সামলাছেন অনেকদিন হল । সময়ের সুনামিতে অনিশ্চয়তার ঢেউ যে আজ তাঁদের দু- কূলে নিয়ে আসবে তা মনে হয় ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেননি। তবে লক্ষ্যে অবিচল বাবুল হোড় এবং শিবব্রত দত্তর সভাপতি পদে হাইপ্রোফাইল ‘ তারাপুর ডুয়েল ‘ কে ঘিরে সরগরম জেলা ক্রীড়া সংস্থার রাজনীতি।
বাবুল হোড়, নামটার কোনও ‘ ইন্ট্রো ‘ র প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না। বরাক থেকে ব্রহ্মপুত্র, ক্রীড়াসংগঠক হিসেবে আলাদা একটা পরিচিতি রয়েছে বাবুল হোড়ের। সংস্থার সিটিং প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব ঠিকঠাক চলছিল। বাদশার ( পড়ুন বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং ) সঙ্গে সংসারটাও করছিলেন বেশ মাপজোখ করেই। আচমকাই তাল কাটে। প্রায় দেড় বছর আগে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে গিয়ে গেরুয়া প্রতিরোধের সম্মুখীন হোন। সেই থেকেই ডিএসএ চ্যাপ্টারে একটা ‘ মিথ ‘ তৈরি হয়ে যায়, বাবুল হোড় হটাও!! নানান প্রতিকূলতার মধ্যে ভেঙে পড়া তো দূরের কথা একবারের জন্যও মচকাননি। ফলাফল যাই হোক বলেই রেখেছেন, এটাই শেষবারের জন্য। নিজের প্রানপ্রিয় জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চিরতরে ‘ বিদায় ‘ জানাবেন। শাসক গোষ্ঠীর এত চাপ সত্ত্বেও নিজের দাবিদারিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসী বাবুল হোড়। তিনি বলেন,’ ডিএসএর প্রত্যেক ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। অতীতেও আমাকে সবাই দু হাত দরাজ করে সাহায্য করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সব ক্লাব, স্কুল, কলেজ, আজীবন সদস্যরা আমার পাশেই থাকবেন। গত এজিএমের মত এবারও বিগ মার্জিনেই জিতব, এতটুকু কনফিডেন্স তো রয়েছেই।’ যতই কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলেন না, বাবুল হোড় খুব ভালোভাবেই জানেন যে বিজিএমে তাঁর পথটা এত মসৃণ নয়। অনেক বিশ্বস্থ সহযোগীই এখন যাত্রী হয়েছেন বিরোধী শিবিরের বাসে। বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী এবং বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং না থাকায় সার্বিক চিত্রপটটা ১৮০ ডিগ্রি পাল্টে গেছে। এখন সভাপতি পদে তাঁর প্রতিপক্ষ তারাপুর এসির সচিব শিবব্রত দত্ত। এই তারাপুর এসির সভাপতি আবার বাবুল হোড়। নিজের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বাবুল হোড়ের বক্তব্য হল,’ শিবু আমার ছোট ভাইয়ের মত। ওঁর বড় ভাই আমার স্কুল সতীর্থ ছিল। সেই সূত্রে শিবব্রত দত্ত -র সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।আমিও তো তাঁকে সহ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে সে তা মানেনি। যাক গে এসব তো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এখন যখন ভোটের বিষয়টা উঠে এসেছে। তখন প্রতিপক্ষ তো প্রতিপক্ষই। আশা করি শেষ হাসি আমিই হাসবো।’ ফের সভাপতি পদে বসলে কি করবেন ? বাবুল হোড় আরও বলেন,’ প্রথমত যতই চক্রান্ত হোক না কেন, ডিএসএর এক ইঞ্চি জমিও বেহাত হতে দেবো না। ডিএসএর তহবিলে হাত না দিয়ে ইন্ডোরের কাজ শেষ করবো। ‘ লক্ষ্যগুলো তেমন মন্দ নয়। কিন্তু সভাপতি পদে পৌঁছার রাস্তাটা কাঁটায় ভরা বাবুল হোড়ের।
সামান্য কানাঘুসো চলছিল। তবে বিজিএমের বিউগল বাজার পর তেমন একটা চর্চায় ছিলেন না পেশায় চারটার্ড একাউন্টেন্ট শিবব্রত দত্ত। কিন্তু আচমকা প্রেক্ষাপট বদলে সংবাদ শিরোনামে শিবব্রত। হয়েছেন বিজিএমে শাসক শিবিরের মুখ। শেষমুহূর্তে নাম প্যানেলে আসলেও শিবব্রত দত্ত কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বেশ নাম ডাক রয়েছে তাঁর। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রয়েছেন তারাপুর এসির সচিব পদে। তাছাড়া শিলচর স্পোর্টিং, শিলচর ফুটবল একাডেমির সঙ্গেও জড়িত তিনি। এর পাশাপাশি স্থানীয়ের পাশাপাশি জাতীয়, আন্তর্জাতিক খেলাধুলাকে সবসময় ফলো করেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে শিবব্রত দত্তের বক্তব্য,’ খেলাধুলা খুবই পছন্দ করি। ডিএসএ মাঠে আমি সবসময় খেলা দেখতে আসি। তাছাড়া অনেকদিন ধরে তারাপুর এসি, শিলচর স্পোর্টিং, শিলচর ফুটবল একাডেমির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। তাই বলবো সংগঠক হিসেবে আমাকে কেউ থুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না।’ হাইপ্রোফাইল সভাপতি পদে শিবব্রত দত্তের প্রতিপক্ষ বাবুল হোড়। ডিএসএ সভাপতি বাবুল হোড়ের দাবি অনুযায়ী তিনিও শিবব্রত দত্তকে সহ সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিষয়টাকে অকপটে মেনে নিয়েই শিবব্রত দত্ত বলেন,’ তখন আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তবে এরপর সার্বিক চিত্রে অনেক বদল এসেছে। শুভাকাঙ্খীদের চাহিদা এবং চাপ সৃষ্টির দরুণ মত বদলে বাধ্য হয়েছি। সকালে ফোন করে বাবুল দার কাছে থেকে আশীর্বাদও নিয়েছি। ‘ প্রতিপক্ষ যখন বাবুল হোড়, হৃদয়ে চিন্তার ঝড় উঠাটা স্বাভাবিক। তবে শিবব্রত দত্ত কিন্তু ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এগোতে চান। তাঁর কথায়,’ বাবুল হোড়ের মত আমিও শহরে বেশ জনপ্রিয় মুখ। অনেকেই আমাকে চেনেন এবং ভালোবাসেন। একটু দেরিতে হলেও প্রচার শুরু করেছি। সদস্যদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াই পাচ্ছি। তাই জয়ের ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ আশাবাদী।’ সভাপতি পদে সুযোগ পেলে ডিএসএতে নতুন কিছু চিন্তাধারা আমদানির পক্ষপাতী শিবব্রত দত্ত। তিনি আরও বলেন,’ এখানে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। পরিকাঠামোগত কিছু উন্নতি হলে পাশ্ববর্তী রাজ্য মনিপুর, মিজোরামের মত শিলচর থেকেও খেলোয়াড়রা বাইরে গিয়ে এতদ অঞ্চলের মুখ উজ্জ্বল করবে। ‘
একে অপরের সঙ্গে আন্তরিকতা থাকলেও বিনা যুদ্ধে যে কেউই এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না, এই ক্ষেত্রটা আপাতত তৈরি। ফলে বাবুল – শিবব্রত ‘ র ‘ তারাপুর ডার্বি ‘ প্রত্যাশিতভাবেই থাকছে সংবাদ শিরোনামে।