অনলাইন ডেস্ক : ধরা পড়ার পর পুলিশকে আঘাত করে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হলো সুপারি মাফিয়া। শনিবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে কালাইন ও গুমড়ার মধ্যবর্তী করচূড়া এলাকায়। কালাইন পাইকান এলাকার বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ মাফিয়া জাবির হোসেন (২৯) সুপারি মাফিয়াদের জগতে জুনিয়র জাবির হিসেবে পরিচিত। জাবির সহ তার হাতে আক্রান্ত হয়ে আহত হওয়া পুলিশ কর্মী গিরিধর দাস বর্তমানে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে বার্মিজ সুপারি পাচারে সহায়তার অভিযোগে আটক করা হয়েছে পাঁচ পুলিশ কর্মীকেও। শনিবার এদের আটক করার পর রবিবার সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এনকাউন্টারে জুনিয়র জাবিরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিবরণ দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন জানান, শনিবার দিনেরভাগে দিগরখালে প্রহরারত পুলিশকর্মীরা একটি লরি যেতে দেখে সন্দেহবশত থামতে ইশারা করেন। কিন্তু লরির চালক না থেমে
দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। তখন পিছু ধাওয়া করে অসম -মেঘালয় সীমান্তের কাছে লরিটিকে আটক করা হয়। চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, লরির মালিক জাবির হোসেন, এবং বার্মিজ সুপারিও পাঠাচ্ছিল সে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে
এই তথ্য পাওয়ার পর জাবিরকে তার পাইকান এলাকার বাড়ি থেকে পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়া হয় গুমড়া পুলিশ ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে। রাত আড়াইটা নাগাদ জাবির অসুস্থতা বোধ করছে বলে পুলিশ কর্মীদের জানায়। এরপর পুলিশকর্মীরা চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে রওয়ানা হন কালাইন হাসপাতালের দিকে। পথে করচূড়া এলাকায় নির্জন স্থানে জাবির প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামিয়ে তাকে এক পাশে প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য
নিয়ে যাওয়ার সময় সে পুলিশকর্মী গিরিধর
দাসের মুখে ঘুষি মেরে অন্ধকারের মধ্যে পালাতে শুরু করে। তখন অন্যান্য পুলিশকর্মীরা তাকে থামতে বললেও সে একথা কানে না তুলে এগিয়ে যেতে থাকে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে তার এস আই দীপজ্যোতি বরুয়া প্রথমে শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালান । কিন্তু জাবির এতেও না থামায় তার পায়ে হাঁটুর নিচে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে সে লুটিয়ে পড়লে পাকড়াও করা হয়ে থাকে। এরপর জাবির সহ
আহত পুলিশ কর্মী গিরিধর দাসকে প্রথমে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কালাইন হাসপাতালে। সেখান থেকে দুজনকে পাঠানো হয়, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে দুজনেই মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে গভীর রাতে এসব ঘটনাক্রমের আগে দিনেরভাগে জাবিরকে পাকড়াও করার পর আটক করা হয় পাঁচ পুলিশকর্মীকেও। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাঁচ পুলিশকর্মীকে আটক করার কথা জানালেও এদের নাম খোলসা করেননি। তিনি
জানান, সুপারি পাচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর চেয়ে বেশি কিছু না বললেও, পরবর্তীতে পুলিশের অন্য এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছেন পাঁচ পুলিশকর্মী হলেন নবীন সিনহা, দ্বিজ সিনহা, প্রানোজিত রাজবংশী, হাসান আলী ও পূর্ণ পাতর। পাঁচজনই কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ কর্মী।
ওই উচ্চপদস্থ সূত্রটি জানান, পাঁচজনকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি জানান,জাবির ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসা বাদের সূত্রে বেরিয়ে আসে তার সঙ্গে এই পাঁচ পুলিশকর্মীর সম্পর্কের কথা। জাবির যে বয়ান দিয়েছে সে অনুযায়ী, এই পাঁচ পুলিশ কর্মী তাকে নানা তথ্য দিয়ে পাচারে সহায়তা করতেন। কখন পাচারের জন্য পরিস্থিতি সুবিধাজনক, এসব তথ্য আগাম জানিয়ে দিতেন তাকে। এছাড়া নির্বিঘ্নে যাতে সুপারি পাচার করা সম্ভব হয় সেই ব্যবস্থাও করে দিতেন। পাঁচ পুলিশ কর্মী ছাড়াও কয়েকজন পুলিশ কর্মীর সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম নামে এক দালালকেও আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই জসিম বিগত দিনে এক পুলিশ আধিকারিকের গাড়ি চালাতো। সেই সূত্রে পুলিশের
হালহকিকত সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত জসিমও পাচারের ক্ষেত্রে থাকতো সহায়কের ভূমিকায়। তাকেও বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
সাসপেন্ড হওয়া পুলিশের “পঞ্চরত্ন” সম্পর্কে জানা গেছে, এদের মধ্যে তিন জনের চাকরিতে যোগ দেওয়ার হয়েছে মাত্র দু’ মাস। এর মধ্যেই এরা বার্মিজ সুপারি পাচারের মতো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায়, বিস্ময় প্রকাশ করে এক পুলিশকর্তা বলেন, এরপর তো কারো উপর ভরসা করাটাই হয়ে পড়বে মুশকিল।
এসবের পাশাপাশি এবার জুনিয়র জাবির গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সুপারি মাফিয়া জগতে সিনিয়র জাবির হিসেবে পরিচিত কালাইন এলাকারই অন্য এক জাবিরকে ঘিরে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এক বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, যখন লরিচালক জাবিরের নাম খোলসা করেছিল, তখন স্বাভাবিকভাবে পুলিশ ভেবে নিয়েছিল সিনিয়র জাবিরের কথা। পাচার বাণিজ্যে তার নাম জুনিয়র জাবিরের তুলনায় অনেক বেশি পরিচিত। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিনিয়র জাবির বর্তমান রয়েছে কাশ্মীর ভ্রমণে। সুপারির মালিক জুনিয়র জাবির। বর্তমানে জুনিয়র জাবিরের পাচার বাণিজ্যে সম্পর্ক থাকা অন্যান্যদের সম্পর্কেও খোঁজ চলছে।