অনলাইন ডেস্ক : বড় বড় কোম্পানির “সেলস এক্সিকিউটিভ”-সেজে বাজার দরের অর্ধেক মূল্যে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির টোপ দিয়ে একের পর একজনকে আর্থিক প্রতারণা করে চলছিল বিপ্লব মালাকার ও দীপু দাস। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলো শিলচর ইটখলা স্বামীজিরোডের বাসিন্দা এই প্রতারক জুটি।
জানা গেছে শ্রীকোনা এলাকার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দুজনকে। কিভাবে প্রতারণা করতো দুজন, এনিয়ে পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ধোপদুরস্ত কাপড়চোপড় পরে তারা কোনও বড় কোম্পানির “সেলস এক্সিকিউটিভ” সেজে হাজির হতো বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে। যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে নাম নিতো সে ধরনের কোনও কোম্পানির। কখনও কসমেটিক, কখনও লোহা, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি সামগ্রীর বড় বড় কোম্পানির নাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে হাজির হয়ে প্রথম কয়েক দফা যথারীতি নির্ধারিত মূল্যে সামগ্রী সরবরাহ করতো।আর তাদের ঘিরে যাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ না থাকে এর জন্য কোম্পানির বড় মাপের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে তাদের কোনও এক সঙ্গীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দিত তারা। সঙ্গে অনলাইনে সামগ্রীর মূল্য মেটানোর জন্য নিজেদের মোবাইলফোনে ফটো উঠিয়ে রাখা “কিউ আর কোড” তুলে ধরতো ব্যবসায়ীর সামনে। এভাবে বার কয়েক স্বাভাবিকভাবে সামগ্রী সরবরাহের পর শুরু হতো তাদের আসল খেলা। কয়েকদফা সামগ্রী বিক্রির পর তাদের বিশ্বাস করে ফেলা ব্যবসায়ীকে বলতো, কোম্পানি স্টক খালি করতে চাইছে,অর্ধেক দামে সামগ্রী বিক্রির “অফার” রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, মূল্য মিটিয়ে দিতে হবে আগাম, মূল্য মেটানোর দিন কয়েক পর সরবরাহ করা হবে সামগ্রী। বড় বড় কোম্পানির ব্যাপার, অনেক ব্যবসায়ীই দ্বিগুণ লাভের টোপ গিলে তাদের কথামতো “কিউ আর কোড” মারফত পাঠিয়ে দিতেন টাকা। কিন্ত শেষপর্যন্ত এভাবে আগাম টাকা নেওয়ার পর আর দেখা মিলতো না বিপ্লব ও দিপুর। দুজন নাপাত্তা হওয়ার পর যখন ব্যবসায়ীরা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তখনই জানা যেত বিপ্লবরা আদতে সেসব কোম্পানির সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নয়। আর যেসব একাউন্টে তারা ব্যবসায়ীদের অর্থ জমা করাতো, সেসব অ্যাকাউন্টও কোম্পানির নয় মোটেই।
পুলিশের সূত্রটি জানান, দুজনের প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমে দেখা গেছে বিপ্লবরা যেসব “কিউ আর কোড” মারফত ব্যবসায়ীদের টাকা পাঠাতে বলতো সেসব আসলে বিভিন্ন ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএসপি)-এর। তখন সংশ্লিষ্ট সিএসপিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে চঞ্চল্যকর তথ্য। সিএসপিরা জানান, এই দুজন মোটেই তাদের পরিচিত নয়। তাদের কাছে গিয়ে পরিচয় দিত তারা অন্য কোনও শহরের বাসিন্দা। নিজেদের মা বা বাবাকে চিকিৎসার জন্য শিলচরে নিয়ে এসেছে। চিকিৎসার জন্য টাকার কিছুটা খামতি হয়ে গেছে। শিলচরে তাদের পরিচিত কেউ নেই। এবার বাড়ি থেকে টাকা আনাতে হবে। সিএসপির “কিউ আর কোড” ব্যবহার করতে দিলে পরিজনরা সংশ্লিষ্ট একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। আর এ থেকে সিএসপি নিজের কমিশন কেটে রেখে বাকিটা যেন তাদের দিয়ে দেন।
এভাবে সিএসপিদের বুঝিয়ে তাদের কিউআর কোড নিজেদের মোবাইলে ফটো উঠিয়ে নিতো বিপ্লবরা। এরপর এই “কিউ আর কোড” শিকার ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরে সেসব মারফত টাকা পাঠাতে বলত তাদের। ব্যবসায়ীরা টাকা পাঠানোর পর তা জমা হতো সিএসপি-দের একাউন্টে। এরপর সিএসপিরা নিজেদের কমিশন কেটে রেখে বাকি টাকা উঠিয়ে দিয়ে দিতেন বিপ্লবদের।এভাবেই তারা চালিয়ে যাচ্ছিল ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারবার। কিন্তু সরাসরি কোনও প্রমাণ না রেখে কারবার চালিয়ে যাওয়ায় তাদের সনাক্ত করাও সম্ভবত ছিল না। তবে সম্প্রতি শ্রীকোনার এক ব্যবসায়ীকে এভাবে লোহা সরবরাহের নামে ৭০ হাজার টাকা প্রতারণার পর তদন্তে শনাক্ত হয়ে যায় বিপ্লব ও দিপু। মঙ্গলবার তাদের দুজনকে পাকড়াও করে পুলিশ। এরপর বুধবার পেশ করা হয় আদালতে। আদালতের অনুমতিতে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। দুজনকে পাকড়াও করলেও ঠিক কিভাবে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে পুলিশ এই মুহূর্তে এনিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়।
পুলিশের সূত্রটি জানান এ পর্যন্ত যে আভাস পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী, বিপ্লবদের এই প্রতারণা চক্রে জড়িত রয়েছে আরও কয়েকজন। এরা দুজন ময়দানে নেমে কাজ কারবার চালালেও আড়ালে থেকে সহায়তা করছে অন্য সঙ্গীরা। এবং শুধু কাছাড় জেলাই নয়, গোটা বরাক উপত্যকা সহ প্রতিবেশীর রাজ্য ত্রিপুরায়ও এভাবে অনেককে জালে ফাঁসিয়ে তারা ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তাদের চক্রের অন্যান্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।