অনলাইন ডেস্ক : ‘ঘর ঘর মোদি’ স্লোগানে ভর করে গত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। এবার ঠিক এরই আদলে ‘ঘর ঘর অরুণোদয়’ স্লোগান নিয়ে অসমে বাজিমাত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁর নির্বাচনী বক্তব্যে এটা ছিল স্পষ্ট। বললেন, ভোট পরেই অসমের প্রত্যেক ঘরে ঘরে একটি করে অরুণোদয় প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া হবে। হিমন্তবিশ্ব শর্মা এদিন ভোটারদের তাতাতে নাচলেন, গাইলেন এবং জয় করলেন অনুগামীদের মন। দিলেন মোদির গ্যারান্টির সঙ্গে মামার ওয়ারান্টি। মন খুলে দিলেন প্রতিশ্রুতিও। নতুনের সঙ্গে পুরোনো প্রতিশ্রুতিও স্মরণ করিয়ে গেলেন তিনি। বললেন, বিজেপিকে ভোট দিন। উন্নয়নের তোড়ে বদলে যাবে বরাক উপত্যকা। ‘২৬ এর আগে সম্পন্ন হবে মহাসড়কের কাজ, চালু হবে মিনি সচিবালয়। পাঁচগ্রাম পেপার মিলের জায়গায় হবে জাগিরোডের ধাঁচে বৃহৎ কারখানা। আর করিমগঞ্জে যদি কৃপানাথ মালা জয়ী হন, তাহলে হাইলাকান্দিতে হবে মেডিকেল কলেজ। তবে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী, প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতেও ভুলেননি। বলেন, কংগ্রেস এখন আইসিইউ-তে আছে। কখন কী হয় অবস্থা!
বৃহস্পতিবার কাটিগড়ায় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার ছিল নির্বাচনী সভা। শিলচর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্যর হয়ে হিলাড়া ফুটবল মাঠে তিনি সম্বোধন করেন এক বিশাল জনসভা। হেলিকপ্টারে করে মাঠের পাশেই অবতরণ করে বক্তব্য রাখেন তিনি। রাজ্যে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার এবং কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন পেশ করেন তিনি। বলেন, অসমে এখন ধর্না, পিকেটিং, গোলাগুলি ইত্যাদি অশান্তি শেষ হয়েছে। উন্নয়নের এক গতি নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য। আলফা সহ অন্যান্য ডিমাসা, কার্বি আন্দোলনও নেই। সবাই শান্তির পথে এগোচ্ছে। ফলে অসম এখন দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজ্য হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। চাকরির ক্ষেত্রেও নজির গড়েছে এই রাজ্য। ১ লক্ষ চাকরির মাইল ফলক অতিক্রম করে এখন নতুন চিন্তাধারা নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২৬ এর আগে আরও ৫০ হাজার চাকরি দেবে তাঁর সরকার। তাছাড়া লোকসভা ভোটের পরেই অসমের ঘরে ঘরে একটি করে অরুণোদয় প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া হবে। ‘ঘর ঘর মোদি’ স্লোগানের আদলে ‘ঘর ঘর অরুণোদয়’ আওয়াজ তুলে হিমন্তবিশ্ব বলেন, একটি ঘরও এই প্রকল্প থেকে বাদ যাবে না। লাখপতি বাইদেউ প্রকল্পের অধীনেও প্রত্যেক আবেদনকারীকে লোকসভা ভোটের পর দেওয়া হবে অর্থ সাহায্য।
এদিন তাঁর বক্তব্যে হিমন্তবিশ্ব শর্মা আরও বলেন, বরাকের উন্নয়নে তাঁর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই ২০২৬ এর ভোটের আগেই মহাসড়কের কাজ শেষ হবে। মিনি সচিবালয়েও কাজ শুরু হবে ‘২৬ এর আগে। তাছাড়া বন্ধ হয়ে পড়া বরাকের একমাত্র বৃহৎ কারখানা পাঁচগ্রাম কাগজ কলের জায়গায় জাগিরোডের ধাঁচে স্থাপন করা হবে অন্য এক বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এবছর কেন্দ্রে মোদি সরকার ফের ক্ষমতায় বসার পরই পাঁচগ্রামে হবে এই শিল্প প্রতিষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী করিমগঞ্জ লোকসভা আসনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কৃপানাথ মালা জিতলে হাইলাকান্দিতে স্থাপন করা হবে মেডিকেল কলেজ। তবে কৃপানাথ জয়ী না হলে হাইলাকান্দিতে মেডিকেলের কোনও গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কিছুই দিতে চাননি হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
এদিকে, প্রকাশ্য সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বলেন, রাজ্যের সবকটি আসনে বিজেপির জয় নিয়ে আশাবাদী তিনি। প্রথম দফার ৫টিতেই জিতবে তাঁর দল। দ্বিতীয় দফা নিয়েও পুরোপুরি আশাবাদী তিনি। এরমধ্যে শিলচর নিয়ে কোনও সংশয় নেই। জয় আসতে পারে করিমগঞ্জেও। এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুসলিম ভোটাররাও এবার বিজেপিকে ভোট দেবেন। কারণ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে উন্নয়ন করে যাচ্ছে বিজেপি। তাছাড়া হিন্দু থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুসলমানরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। করিমগঞ্জের উদাহরণ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ এই মাত্র করিমগঞ্জ থেকে এলাম। মুসলমানদের সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে র্যাশ পড়ে গেছে হাতে। ব্যথা হয়ে গেছে’!
এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেস দল নিয়ে তেমন কোনও বাক্য ব্যয় করেননি। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কায়দা করে প্রধান বিরোধী দলটিকে আক্রমণ করলেন তিনি। বলেন, কংগ্রেস তো এখন আইসিইউ-তে। কখন কী হয় অবস্থা! এই দল নিয়ে সময় নষ্ট করতে রাজি নন তিনি। বলেন, কংগ্রেসের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। জনগণ এই দল থেকে অনেক দূরে। নেই নেতা-কর্মীও। যারা এখনও কংগ্রেসে থেকে গেছেন তাঁরাও যেকোনও সময় বিজেপিতে আসতে পারেন। আসবেন প্রদেশ সভাপতি ভুপেন বরাও। আসলে আইসিইউ-তে থাকা একটি দলে কে থাকবে কতক্ষন!