অনলাইন ডেস্ক : প্রায় পাঁচ দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের ইতি টেনে শেষমেষ ভারত সরকার এবং অসম সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করল আলফা। শুক্রবার দিল্লিতে আলফার আলোচনাপন্থী অংশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উপস্থিতিতে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ১৬ সদস্যের আলফার দলকে এদিন নেতৃত্ব দেন অনুপ চেতিয়া এবং তাদের বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী। এদিন বিকেল পাঁচটায় দিল্লিতে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন আলফার সদস্যরা এবং একে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এতে অংশ নেওয়ার জন্য আলফার আলোচনাপন্থী সদস্যরা দুদিন আগেই নতুন দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তারা কেন্দ্র সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সেখানে চুক্তির খসড়া যাচাই করে দেখেন। শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। অনুপ চেতিয়া বলেন, চাকরির ক্ষেত্রেও ভূমিপুত্রদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম, ফলে এখন আর সশস্ত্র আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। আমরা পরেশ বড়ুয়াকে বলতে চাই, আপনি মূল স্রোতে ফিরে আসুন। আমার বিশ্বাস তিনি আমাদের এই আবেদনে সাড়া দেবেন।’রাজনৈতিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে তারা আরেকটা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা হল প্রথমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর সীমা বিবাদ মেটানো। তারা বলেন, ‘অসমের সীমান্ত সুরক্ষা বরাবরই আমাদের অন্যতম দাবী ছিল। সেটা পার্শ্ববর্তী দেশ হোক বা রাজ্য, কেউ যাতে অসমের জমি দখল করতে না পারে এই আশ্বাস আমরা কেন্দ্র সরকারের কাছে চেয়েছিলাম এবং তারা আমাদের বলেছেন এই কথা রাখবেন। ভোটার তালিকায় অবৈধ বিদেশীদের অন্তর্ভুক্তি আটকানোর কথাও আমরা আলোচনায় তুলেছি এবং কেন্দ্র সরকার বলেছেন এক্ষেত্রে নজর দেওয়া হবে। শুধুমাত্র সাধারণ ভারতীয় নাগরিকরাই যাতে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, এটাই চেয়েছি আমরা।’ তারা বলেন, ‘অবৈধ প্রবেশকারীদের বাছাই করতে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। আমরা চাই একটা ত্রুটিহীন সম্পূর্ণ এনআরসি প্রক্রিয়া হোক যার মাধ্যমে বিদেশীদের বাছাই করা সম্ভব হবে। বিদেশীরা রাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, প্রথমে এগুলো শনাক্ত করে জমিগুলো দখলমুক্ত করতে হবে, এরপর ভূমিপুত্রদের পর্যাপ্ত জমি প্রদান করতে হবে। ঐতিহাসিক জায়গা যেমন রংঘর, খড়েঙঘর, খাসপুর, সরাইঘাটের যুদ্ধক্ষেত্র ইত্যাদি পর্যটনের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং এগুলোকে পর্যটন স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত অনুদান দেবে কেন্দ্র সরকার। যেসব চা বাগান এখন আর পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছে না এবং কিছু কিছু বাগান যেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, এদের পুনরায় চালু করতে বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া আরো বহু দাবী রয়েছে যা এখনি আমরা বলতে পারছি না তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন আমরা যে দাবিকে সম্বল করে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি তার প্রতিটি শব্দ তারা রক্ষা করবেন এবং এক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব হবেনা।’