অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার ঈদের দিনে উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিলচর। শহরের পঞ্চায়েত রোডে দুই গুষ্টির সংঘর্ষ, মসজিদ সহ কিছু যানবাহনে ভাঙচুর চালানো, এসব ঘটনার মাঝে আহত হয়েছেন কমপক্ষে সাতজন। যার দরুন পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়।
ঘটনার কেন্দ্রস্থল পঞ্চায়েত রোড হলেও উত্তেজনায় সীমিত থাকেনি শুধু ওই এলাকায়। এর পাশাপাশি রংপুর কদমতলা এবং চিরুকান্দি এলাকায়ও সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। পুলিশ ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত পঞ্চায়েত রোডের জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকার এক বাড়িতে কুরবানীর পশুর মাংস কাটাকে ঘিরে। তখন সময় দুপুর প্রায় বারোটা। মাংস কাটা হচ্ছিল বাপু মজুমদার নামে এক ব্যক্তির বাড়ির ভেতর। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সে সময় মালিনী বিলের দিক থেকে প্রায় জনা পঞ্চাশেক লোক কয়েকটি ই–রিক্সায় চড়ে সেখানে গিয়ে উচ্চবাচ্চ্য শুরু করেন। এরপর একসময় তারা বাপ্পু মজুমদারের বাড়িতে ঢুকে উৎপাত চালাতে শুরু করলে, আপত্তি জানান বাড়ির লোকেরা। এগিয়ে আসেন অন্যান্যরাও। দুপক্ষের কথা কাটাকাটি শুরু হলে হানাদাররা সঙ্গে নিয়ে আসা অস্ত্রশস্ত্র সহ হামলা চালাতে উদ্যত হয়। এতেই বিগড়ে যায় পরিস্থিতি।
জানা গেছে সেখানে দু পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে চলতে থাকে পাথর বর্ষণও। সেসময় হানাদারদের একাংশ পাথর ছোড়ে কাছেই থাকা জামে মসজিদেও ভাঙচুর চালায়। পাল্টা হিসেবে ভাঙচুর করা হয় হানাদাররা যেসব ই রিক্সায় চড়ে গিয়েছিল সেসবেও।
এদিকে ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজনা সৃষ্টি হয় আশপাশ এলাকায়ও। দেখা যায় সংলগ্ন কলেজরোড় এলাকায় জড়ো হয়েছেন প্রচুর লোক। আতঙ্কে বন্ধ হয়ে যায় এলাকার দোকানপাট।সেসময় সেখানেও ভাঙচুরের শিকার হয় কয়েকটি গাড়ি। শহরের কনক পুর এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি অল্টোকারে চড়ে আসা করিমগঞ্জ বারইগ্রাম এলাকার চার যুবক
লবাব উদ্দিন, বুরুল আহমদ, জাকির আহমদ ও রশিদ আহমদ এই জমায়েত উত্তেজিত লোকেদের মাঝে পড়ে গেলে তাদের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। আর মার খেয়ে হন চারজনই। এসবের মাঝে খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে পৌঁছান পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা। যাদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ অসম রেঞ্জের ডিআইজি কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া, পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো সহ অন্যান্যরা। উত্তেজিত লোকেদের হটাতে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়। জমায়েত উত্তেজিত লোকেদের সেখান থেকে হঠিয়ে দেওয়া হলেও কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে জিসি কলেজের রাস্তায় আক্রান্ত হন নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবক। এরা তাদের আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আহত অবস্থায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করলেও হামলাকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এভাবে ঘন্টা খানেকের উত্তেজনা পর্বের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও কিছুক্ষণ পর চিরুকান্দিতে ফের সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। জানা গেছে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কয়েকজন লোক সেখানে গিয়ে আপত্তিজনক সব কথাবার্তা বলতে থাকলে প্রতিবাদ জানান স্থানীয় লোকেরা। একসময় স্থানীয়রা তাড়া করলে আপত্তিজনক কথাবার্তা বলা ওই লোকেরা পালিয়ে যায়। তবে এর রেশ ধরে পরবর্তীতে বিকেলের দিকে মালিনী বিলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের ভেতর রাস্তা ধরে ফের চিরুকান্দিতে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালায় কিছু লোক। যদিও পুলিশ শীঘ্রই সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পঞ্চায়েত রোড থেকে ধরে চিরকান্দি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। এদিকে দুপুরে পঞ্চায়েত রোডে হাঙ্গামা চলার সময়ই রংপুর কদমতলা এলাকায়ও এক বাড়িতে কুরবানীর পশুর মাংস কাটার সময় কিছু লোক আপত্তি জানানোয় সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। তবে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।এসবের পাশাপাশি দুপুরে কলেজরোডে উত্তেজনার পর সেখান থেকে পুলিশ আটক করে কনক পুর এলাকার বাসিন্দা দাস পদবীর দুজন ও চন্দ পদবীর এক যুবককে। এদের বর্তমানে সদর থানায় আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে এদিনের ঘটনা নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মকর্তা মিঠুন নাথ বলেন, পঞ্চায়েত রোড এলাকাটা মিশ্র জনবসতিপূর্ণ। সরকারের তরফে এমন এলাকায় গো হত্যা থেকে বিরত থাকতে ফরমান জারি করা হয়েছে। এদিন পঞ্চায়েত রোডের ওই বাড়িতে গো হত্যার খবর পেয়ে কয়েকজন আপত্তি জানাতে গেলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। এতেই ঘটে যায় ঘটনাটা।যদিও এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, গোহত্যা নয়, একটি ছাগল কোরবানি দিয়ে মাংস কাটা হচ্ছিল বাপু মজুমদারের বাড়িতে। সঙ্গে তারা এও বলেন, কেউ যদি গোপনে নিজের বাড়িতে অন্য কোনও পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন, তবে কারোর তো আপত্তি থাকার কথা নয়। এর চেয়েও বড় ব্যাপার, যারা বাপ্পু মজুমদারের বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন তারা কেউ ওই এলাকার লোক নন। এসেছিলেন মালিনীবিলের দিক থেকে। আসলে পরিকল্পনা করে এভাবে হাঙ্গামা বাঁধানো হয়েছে। এদিকে পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পঞ্চায়েত রোড, চিরুকান্দি সহ শিলচরের অন্যান্য এলাকায় চলছে পুলিশি টহলদারি।