অনলাইন ডেস্ক : স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কাবুগঞ্জ শাখার ম্যানেজার কুলদীপ দাশগুপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে চিফ ম্যানেজার (অডিট) যোগেন্দ্র পান্ডে বর্তমানে রয়েছেন হাজতে । তবে অন্য অভিযুক্ত ব্যাঙ্কের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শিবু নাথের সূত্র ধরে বর্তমানে চর্চায় চলে এসেছে সোনাই নগদিরগ্রাম এলাকার বাসিন্দা দুই দালালের নামও । এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, দুই দালাল শিবু নাথের খুবই ঘনিষ্ঠ। প্রতিদিনই কাজের সময়ে এই দু’জনকে দেখা যেত ব্যাংকে। অনেকের ধারণা ছিল এই দু’জন ব্যাঙ্কের কর্মী। আর তাদের সঙ্গে শিবুর ঘনিষ্ঠতাও চোখে পড়ার মতো। তবে কুলদীপের মৃত্যুর পর থেকে এই দু’জনকে আর ব্যাঙ্কে দেখা যাচ্ছে না। শিবুর সঙ্গে সঙ্গে এই দু’জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ চালালে – ঘটনা নিয়ে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। খবরের সূত্র অনুযায়ী, দুই দালাল মূলত লোন মঞ্জুর নিয়েই মধ্যস্থতা করত। আর এক্ষেত্রে তাদের অন্যতম ভরসার স্থল ছিল শিবুই। আর কুলদীপের মৃত্যুকে ঘিরে লোন সম্পর্কিত কিছু ফাইল গায়েব হওয়ারই অভিযোগ উঠেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই শিবুর পাশাপাশি সন্দেহের আবর্তে চলে আসছে এই দুই দালালও। সূত্রটি জানান, কুলদীপ শিবু ও তার দোসর দুই দালালের কাজকর্মে কিছুটা লাগাম টেনে ধরেছিলেন। তাই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ছিল কুলদীপের উপর। এর সূত্র ধরে তারাই কুলদীপকে বিপাকে ফেলতে ফাইল নিয়ে কিছু করেছে কি না তদন্তে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সূত্রটি আরও জানান, শিবুর ঠাটবাটের দরুন যেমন অনেকেই তাকে বলতেন সুপার ম্যানেজার, তেমনি এই দুই দালালেরও চালচলন চোখে পড়ার মতো। তাদের একজন তো সবসময়ই ঘোরাঘুরি করে থাকে নিজস্ব বিলাসবহুল গাড়িতে। বর্তমানে ব্যাঙ্কের কর্মী মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, শিবু ও তার দোসর এই দালালই কি কোনও কারসাজি করে সেই দুর্বলতার কথা জানিয়ে দিয়েছিল অডিট করতে আসা চিফ ম্যানেজার (অডিট) যোগেন্দ্র পান্ডেকে। আর তা জানতে পেরেই যোগেন্দ্র নানা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন কুলদীপের উপর। পুলিশের এক সূত্র অবশ্য জানান, শিবুরা কিছু করেছে কি না তা এখনও তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে যোগেন্দ্র পান্ডে যে কুলদীপের উপর অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন এর স্বপক্ষে ইতিমধ্যেই কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও কয়েকজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারও লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন, অডিটের নামে পান্ডে তাদের কাছ থেকেও অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তাই ঘটনার মূল খলনায়ক হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে পান্ডেকেই। পুলিশের সূত্রটি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে না চাইলেও, ব্যাঙ্কের কর্মী মহলের চর্চায় উঠে আসছে অডিটকে ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের কথা। কর্মী মহলের বক্তব্য, অডিটকে ঘিরে চাপ দিয়ে আদায়ের এই খেলা শুধু যোগেন্দ্ৰ পান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে সংযোগ থাকার সম্ভাবনা অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদেরও। কর্মী মহল থেকে এনিয়ে দেশব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পক্ষে সওয়াল করা হচ্ছে। যদিও চাকরি ক্ষেত্রে বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় কেউই এনিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।
এদিকে কুলদীপের মৃত্যুর পর গত কয়েকদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার শিবুকে ব্যাঙ্কে আসতে দেখা গেছে বলে জানা গেছে। ব্যাঙ্কের এক সূত্র জানান, এদিন কর্মস্থলে হাজির হলেও শিবুকে আগাগোড়া দেখা গেছে চুপচাপ। ব্যাঙ্কের অন্যান্য কর্মীরা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও তার তরফ থেকে বিশেষ সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে ধৃত যোগেন্দ্র পান্ডে সম্পর্কে জানা গেছে, তাকে বর্তমানে রাখা হয়েছে শিলচর সেন্ট্রাল জেলের হাসপাতালে। আদালতের নির্দেশে গতকাল বুধবার তাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে জেলে। তবে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে জেলের হাসপাতালে রাখা হয়েছে।