অনলাইন ডেস্ক : নদীর ধারে কাশফুল, প্যান্ডেলের বাঁশে বাঁশে ঠোকাঠুকি, কাউন্টডাউন—- সব মিলে ছবিটা কিন্তু পুজোর-ই। তবে স্রেফ ছবি নয়, বাঙালির পুজোর সঙ্গে কিছু গন্ধও জড়িয়ে থাকে। সবচেয়ে দামী গন্ধের নাম নস্টালজিয়া। আর এই নস্টালজিয়াকে ব্যবহার করেই এবার পুজোর ভাবনা সাজিয়েছে মেহেরপুর বটেরতল এলাকার ‘মিলন সংঘ ও পূর্ব্বাজ্যোতি ক্লাব সর্বজনীন দুর্গা পূজা কমিটি।’ সঙ্গে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কাণ্ডকে সামনে রেখে দেশের যত ‘অভয়া’কে এযাবৎ লালসার যূপকাষ্ঠে বলি হতে হয়েছে, তার প্রতিবাদ স্বরূপ মহালয়ার ভোরে গণ-তর্পণের আহবান জানিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। তাঁদের বক্তব্য, মহালয়ার ভোরে গণ-তর্পণে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের সামাজিক দায়িত্ব ।
৪৯তম বছরে পা রেখেছে মেহেরপুর বটেরতল এলাকার এই পুজো। শুরু থেকে-ই একটা স্বতন্ত্র ধারায় পুজো হচ্ছে সেখানে। বিগ বাজেট, থিমের কচকচানি, হইহট্টগোল থেকে সবসময়ই দূরে থেকেছেন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। বরং ঐতিহ্য পরম্পরা এবং সাত্ত্বিকভাব বজায়ের ওপর জোর দিয়েছেন সবাই। সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে পুজো কমিটি। ব্যতিক্রম ঘটছে না এবারও। পুজো কমিটির সভাপতি নীতিশ ভট্টাচার্য বলেন, একটা সময় মন্ডপ হত খোলামেলা। পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত চলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জমজমাট আড্ডা। সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনারই চলছে জোর প্রয়াস। পুজোর তিন দিন মণ্ডপে বসছে আনন্দের হাট। গল্পের আসর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে প্রতিদিনই।
তিনি উল্লেখ করেন, আর জি কর হাসপাতাল কাণ্ডে অভয়া হত্যা মামলার সুবিচার চেয়ে মিলন সংঘ ও পূর্বাজ্যোতি ক্লাব সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি পিতৃ পক্ষের শেষে মহালয়ার প্রভাতে প্রতিবাদী কর্মসূচি হিসেবে শিলচরবাসীকে গণ-তর্পণের আহ্বান জানাচ্ছে। অন্নপূর্ণা ঘাটে ওইদিন ভোর চারটায় শুরু হবে এই প্রতিবাদী কর্মসূচি। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ওই ঘটনার প্রতিবাদী কর্মসূচি চলাকালীন গোটা উত্তরপূর্ব জ্বলে উঠবে বলে মন্তব্য করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর ওই প্রতিবাদী মানসিকতাকে অভিনন্দন জানায় পুজো কমিটি।
সাধারণ সম্পাদক শিবা দেব জানান, চিরাচরিত শাস্ত্রীয় প্রতিমা গড়ে সাত্বিকতা বজায় রেখে এলাকার যুব সমাজ এবারেও পুজো আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছে। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদকে ঘিরেই সাজিয়েছেন পুজোর ভাবনা। তিনি বলেন, মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও বাংলায় অভয়া হত্যাকাণ্ডকে দমন করার যেভাবে চক্রান্ত চলছে, তা নিন্দনীয়। কেন্দ্র সরকার যেন বাংলার ওই অনৈতিক শাসকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের পদক্ষেপ করে।
তিনি বলেন, ষষ্ঠীর দিন মন্ডপ চত্বরে হবে প্রতিবাদী সভা। আর ওই সন্ধ্যায় উদ্বোধন হবে মন্ডপের। থাকবে সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালীন এ অঞ্চলের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে মেধাবী পড়ুয়া সহ এলাকার বিশিষ্টদের সম্মান জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, পুজো আয়োজনে আড়ম্বড়ে গা না ভাসিয়ে উপত্যকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বজায় রাখার পক্ষপাতি পুজো কমিটি। তাই ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতি সন্ধ্যায় থাকছে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিদিন দুপুরে বসবে গল্পের আসর। আর সঙ্গে পুজোর তিন দিন থাকবে মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্য সভ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সহসভাপতি নীলোৎপল দেব, কোষাধ্যক্ষ জহরলাল দাস, সহ-সম্পাদক সৌরভ রায়, সহ কোষাধ্যক্ষ সৌরভ সূত্রধর, প্রচার সচিব সুবীর দাস, বিশ্বজিৎ বণিক, বিকি পাল, বিশাল বসাক, কপিল দাস, গোবিন্দ দেব প্রমূখ।